প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম [বিস্তারিত]
প্রবাসী ভাইদের অনেক সময় লোন নেয়ার প্রয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু ঝামেলার বিষয় হলো বেশিরভাগ প্রবাসী ভাইয়েরা জানে না কিভাবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে হয়। তাই আজকে আমরা এই পুরো আর্টিকেল জুড়ে আলোচনা করব, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম
যারা প্রবাসী কল্যাণী ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য মূলত এই লেখা। প্রবাসী ভাইয়েরা যদি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেন তাহলে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তো চলুন জেনে নেই, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৩।
প্রবাসী ব্যাংক কয়েক ধরনের ঋণ প্রবাসী ভাইদের প্রদান করে থাকে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যেসব স্কিমে ঋণ দিয়ে থাকে নিচে উল্লেখ করা হলো:
- অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন
- পুনর্বাসন লোন
- বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন
- বিশেষ পুনর্বাসন লোন
উপরোক্ত স্কিমের লোনসমূহ একজন প্রবাসী ভাই চাইলে কোনো রকম জামানত ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে নিতে পারে। যেসব ভাইয়েরা প্রবাসে যেতে চাচ্ছেন তারা চাইলে এসব ঋণ নিতে পারেন। দুই থেকে তিন বছর মেয়াদে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নেওয়া যায়।
এখন আমরা এই চার প্রকার ঋণের স্কিম বা লোন স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানবো।
অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে অবগত হয়ে খুব সহজে এই লোনটি আপনি নিতে পারেন। এই লোন নেওয়ার কিছু যোগ্যতা রয়েছে যেগুলো আপনার মধ্যে থাকতে হবে। এসব যোগ্যতা বা শর্ত পূরণ করতে পারলে আপনি প্রবাসী কল্যাণ থেকে খুব সহজে অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন নিতে সক্ষম হবেন।
অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন নিতে যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন:
- আপনার জামিনদার ব্যক্তির অবশ্যই আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো হতে হবে।
- আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার নিকটস্থ আত্মীয় স্বজনদের ঋণ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।
- তিন কর্ম দিবসের মধ্যে ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে আপনার ভিসা ও পাসপোর্ট এর দুই কপি ফটোকপি এবং একটি সচল ফোন নম্বর দিতে হবে। ভিসার ফটোকপি যাচাই করার জন্য নিবে।
- এই লোনের জন্য আবেদনকারীকে বিদেশি কর্মস্থলের ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার প্রদান করতে হবে। তবে এটি দেওয়া বাধ্যতামূলক না।
অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন পেতে যে সব ডকুমেন্টস লাগবে:
- উক্ত ঋণের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা দুই কপি ছবি।
- আবেদনকারী জাতীয় পরিচয় পত্রের ডকুমেন্টস।
- আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানার ডকুমেন্টস।
- জামিনদারের সদ্য তোলা দুই কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ডকুমেন্টস।
- শারীরিক যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- ঋণ গ্রহণকারীকে অবশ্যই বীমা সুবিধা হবে।
অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন পরিশোধের চার্জ ও সময়সীমা
- শতকরা সুদের হার ৯% ।
- এই লোনের সময়সীমা আপনার ভিসার সময়ের উপর নির্ভরশীল। তবে সর্বোচ্চ সময়সীমা ২ বছর।
- মাসিক কিস্তি প্রদান করতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কিভাবে লোন নিব?
পুনর্বাসন লোন
প্রবাসী ফেরত ভাইয়েরা চাইলে বিভিন্ন কৃষি প্রকল্পের জন্য পুনর্বাসন লোন নিতে পারেন। এই লোন নিয়ে আপনি চাইলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
এছাড়া আপনি চাইলে পশু পাখি পালন করার জন্য খামার তৈরি করা ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর উদ্যোক্তা ইত্যাদি কাজ করার জন্য এই লোনটি নিতে পারবেন।
পুনর্বাসন লোন পেতে যেসব ক্রাইটেরিয়া বা শর্ত আপনার পূরণ করতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- অবশ্যই আপনাকে প্রবাস ফেরত হতে হবে। অর্থাৎ প্রবাসে একটা নির্দিষ্ট সময় কাজ করার পর আপনি আবার দেশের বাড়িতে এসে এই ঋণ নিতে পারবেন। প্রবাস ফেরতের পাঁচ বছরের মধ্যে বৈধ কাগজপত্র দেখিয়ে এই লোন নিতে হবে।
- ঋণ গ্রহীতাকে অবশ্যই জামানত রাখা সম্পত্তির মালিকানা দলিলাদি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
পুনর্বাসন লোন পেতে যেসব ডকুমেন্টস লাগে:
- ঋণগ্রহীতার সদ্য তোলা তিন কপি ছবি।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সনাক্তকরণের ডকুমেন্টস।
- যে স্থানে প্রকল্পটি গড়ে তুলবেন সেই স্থানের মালিকানা দলিলের কাগজপত্র আর ভাড়া হলে ভাড়ার চুক্তিপত্রের ফটোকপি জমা দিতে।
- বিদেশ থেকে ফেরত আসার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস।
- জামিনদারের বৈধ সকল কাগজপত্র।
- এছাড়া যোগাযোগের জন্য অন্যান্য তথ্য।
পুনর্বাসন লোন পরিশোধের চার্জ ও সময়সীমা
- পুনর্বাসন লোনের সুদের হার শতকরা ৯%।
- সময়সীমা প্রকল্প ও অর্থের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন
অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন, পুনর্বাসন লোন ছাড়াও আপনি চাইলে বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন নিতে পারেন। এই লোনের আওতায় পাঁচটি খাত রয়েছে। যেমন: কৃষিখাত, মৎস্যখাত, কুটির শিল্প খাত, বাণিজ্যিক খাত ও প্রাণী খাত।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন আবার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন আপনি চাইলে প্রকল্প লোন ও চলতি পুঁজি বা নগদ লোন নিতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবারের লোন পেতে যেসব শর্ত বা যোগ্যতা থাকতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- এই লোন পেতে হলে অবশ্যই আবেদনকারীর পরিবারের যে কোন একজন সদস্যকে বিদেশে অবস্থান করতে হবে।
- বিদেশে অবস্থান ন্যূনতম এক বছর পরে এই লোন নিতে পারবেন।
- প্রকল্প পরিচালনকারীর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ থাকা বাধ্যতামূলক।
- কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাফি হিসেবে চিহ্নিত করলে এই ঋণ নিতে পারবেন না।
- মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যদি রাষ্ট্রদ্রোহের সাথে জড়িত থাকে তাহলে এই ঋণ নিতে পারবেন না।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবারের লোন পেতে যেসব কাগজপত্র লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- বিদেশে অবস্থান করা ব্যক্তির সকল প্রকার কাগজপত্র সত্যায়িত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ: পাসপোর্ট এর সিলকৃত পৃষ্ঠা, ভিসা কার্ডের ফটোকপি, স্মার্ট কার্ডের ফটোকপি ইত্যাদি কাগজপত্র।
- এই লোন পেতে হলে প্রকল্প পরিচালনকারীর অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণের প্রমাণপত্র লাগবে।
- এছাড়া পারিবারিক তথ্য ও জীবন বৃত্তান্ত, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার সত্যায়িত ডকুমেন্টস, সদ্য তোলা তিন কপি ছবি ও আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
- এই লোন পেতে দুইজন জামিনদারের সনাক্তকরণের যাবতীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করে জমা দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ: জামিনদারদের জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার সত্যায়িত ডকুমেন্টস, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের সার্টিফিকেট এর সত্যায়িত কপি এবং সদ্য তোলা দুই থেকে তিন কপি সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে।
- ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- জামানতকৃত জমিজমার প্রয়োজনীয় বিবরণসহ মালিকানা দলিল জমা দিতে হবে।
- এই লোনটি পেতে হলে অবশ্যই প্রকল্প পরিচালনাকারীর আয়-ব্যয়ের একটি সম্ভাব্য হিসেবের তথ্য দিতে হবে।
- সিআইবি রিপোর্ট লাগবে।
- সময়মতো ঋণ পরিশোধ করার হলফনামা জমা দিতে হবে।
বিশেষ পুনর্বাসন লোন
আপনি অভিবাসন বা মাইগ্রেশন লোন, পুনর্বাসন লোন ও অভিবাসী বঙ্গবন্ধু বৃহৎ পরিবারের লোন ছাড়াও বিশেষ পুনর্বাসন লোন নিতে পারবেন। বিশেষ পুনর্বাসন লোন পেতে বিস্তারিত তথ্য জানতে হলে নিচের এই লিংকে ক্লিক করে জেনে নিন।
Pdf download : বিশেষ পুনর্বাসন লোন পিডিএফ
উপরের লিংক থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করে আপনি এই ঋণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারবেন খুব সহজে। এই ঋণ পেতে কি কি শর্ত বা যোগ্যতা রয়েছে এবং এই ঋণ পেতে কি কি কাগজপত্র লাগবে যে সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য পেয়ে যাবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কিত (FAQs)
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়?
আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা লোন নিতে পারবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কোথায় আছে?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অসংখ্য শাখা রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রধান শাখা ইস্কাটন গার্ডেন রোড, ঢাকা-১০০০ এ অবস্থিত। আপনি যদি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সকল শাখা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক দিয়ে জেনে নিন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঢাকা কোথায়?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা ঢাকায় অনেকগুলো রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রধান শাখা ইস্কাটন গার্ডেন রোড, ঢাকা-১০০০। এছাড়া আরো অনেক শাখা রয়েছে ঢাকায় সেগুলো জানতে লিঙ্কে ক্লিক করে জেনে নিন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কোথায় আছে?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বাংলাদেশের অনেক জেলায় রয়েছে। যেমন: ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, সুনামগঞ্জ, পাবনা কুষ্টিয়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ প্রায় সব জেলায় এর শাখা রয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু জেলায় আরো অনেক শাখা রয়েছে। আপনি যদি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সকল শাখা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে নিচের এই লিঙ্কে ক্লিক দিয়ে জেনে নিন।