গনোরিয়া এন্টিবায়োটিক ঔষধ | ট্যাবলেট | সেবনবিধি | পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া | দাম

গনোরিয়া এন্টিবায়োটিক ঔষধ এর নাম ও খাওয়ার নিয়ম
গনোরিয়া রোগটি নারী-পুরুষ উভয়ের হতে পারে। এটি বেশ কষ্টদায়ক একটি যৌন সংক্রামক রোগ। এই রোগে পুরুষের আক্রান্ত হলে প্রস্রাবের সময় সাধারণত জ্বালাপোড়া হয় এবং মুত্রনালী দিয়ে পুঁজ বের হয়। এ রোগে সাধারণত নারীদের চেয়ে পুরুষেরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে এবং নারীর তুলনায় পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার হার দ্বিগুণ হয়েছে।  গনোরিয়া ইনফেকশনের কারণে সাধারণত বন্ধ্যাত্ব সমস্যা হতে পারে। সমকামী পুরুষদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

গনোরিয়া কেন হয়?

গনোরিয়া রোগটি নাইসেরিয়া গনোরিয়া’ নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে হয়ে থাকে। যৌনবাহিত এই রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে মেলামেশা করার ২ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশিত হয়। এই রোগটি শুধুমাত্র নারী ও পুরুষের মধ্যে মেলামেশা হলে তখনই ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত জীবাণুবাহিত রোগ। তবে এটা কোন বংশগত রোগ নয়। এটি শুধুমাত্র নারী ও পুরুষের অবাধ যৌন মিলনের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

গনোরিয়া রোগের লক্ষণ

পুরুষদের উপসর্গ:
  • গলা ব্যথা
  • অন্ডকোষ ফুলে আপেলের মতো বড় হতে পারে
  • পুরুষাঙ্গ বা গায়ে ক্ষত বা ঘা লক্ষ্য করা
  • শুক্রাশয় ও অন্ডকোষে ব্যথা
  • যৌনাঙ্গে ব্যথা
  • যৌনাঙ্গে ফোলা ফোলাভাব বা লালভাব
  • যৌনাঙ্গ দিয়ে পুঁজ বের হওয়া
  • মলদ্বারে আক্রমণ (চুলকানি ও রক্তপাত)
নারীদের উপসর্গ:
  • জ্বর 
  • যোনি থেকে ডিসচার্জ 
  • ঘন ঘন প্রস্রাব 
  • অনিয়মিত মাসিক
  • প্রস্রাব ব্যথা বা জ্বালা করা 
  • গলা ব্যথা
  • পিরিয়ডে সমস্যা 
  • কোমর ও তলপেট ব্যথা
  • কুচকির লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া
  • মিলনের পর সামান্য রক্ত বের হওয়া
  • যোনিপথের আশপাশের কিছু গ্রন্থি ফুলে যায় ও ফোঁড়া হয়
  • প্রচুর পরিমাণে বিজলপুঁজ মিশ্রিত বা পুঁজের মতো প্রস্রাব বের হওয়া

গনোরিয়া হলে করণীয়

  • প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষদের নিরাপদ যৌন চর্চা করতে হবে। পাশাপাশি হাইজিন শিক্ষার প্রচলন জরুরী।
  • উপসর্গ দেখা মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
  • আক্রান্ত অবস্থায় যৌন সঙ্গম করা যাবে না।
  • একাধিক সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না।
  • চিকি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে গনোরিয়া এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করতে হবে।
  • অবশ্যই এই রোগের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

গনোরিয়া এন্টিবায়োটিক ঔষধ

সিপ্রোসিন ট্যাবলেট

খাওয়ার নিয়ম: সিপ্রোসিন বাংলাদেশের বিখ্যাত ওষুধ কোম্পানি স্কয়ারের একটি ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধ। এই এন্টিবায়োটিক ওষুধের গ্রুপ নাম হলো সিপ্রোফ্লক্সাসিন। এটি বাজারে সিরাপ ও ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের দৈনিক দুইটি ট্যাবলেট সেবন করতে হয়। সকালে এবং রাতে একটি করে খাওয়ার পর ভরা পেটে। দৈনিক ৫০০ থেকে ৭৫০ মি.গ্রা. সেবন করতে হবে।‌‌ অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় এটা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে ভুলেও স্তনদানকালে এটি খাওয়া যাবে না।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: সিপ্রোসিন ট্যাবলেট সেবনে নিম্নে উল্লেখিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সমূহ দেখা যায়:
  • হজমক্রিয়ায় গোলযোগ
  • তলপেটে ব্যথা
  • বমি
  • বমিভাব
  • ডায়রিয়া
  • বিলিরুবিন
  • মাথা ব্যথা
  • ঝিমুনি
  • বিভ্রান্তি
  • খিঁচুনি 
দাম: সিপ্রোসিন ২৫০ মি.গ্রা. প্রতিটি ট্যাবলেট এর মূল্য ১৫.০৫ টাকা এবং ৫০০ মি.গ্রা. প্রতিটি ট্যাবলেট এর মূল্য ৮.৫৬ টাকা।

সিপ্রোফ্লক্সাসিন গ্রুপের আরো কিছু গনোরিয়া রোগের ঔষধ এবং সাথে ব্র্যান্ডের নাম নিচে দেওয়া হলো:
  • Aprocin Tablet (Aristopharma)
  • Neofloxin Tablet (Beximco)
  • Ciprozid Tablet (Drug)
  • Beuflox Tablet (Incepta)
  • Ciprox Tablet (Opsonin)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: সিপ্রোফ্লক্সাসিন  গ্রুপের সকল ওষুধ খাওয়ার নিয়ম ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একই।

ডক্সিক্যাপ (Doxicap) ক্যাপসুল

খাওয়ার নিয়ম: ডক্সিক্যাপ বাংলাদেশের পরিচিত একটি ওষুধ কোম্পানি রেনেটা লিমিটেডের একটি ক্যাপসুল জাতীয় ওষুধ। এই এন্টিবায়োটিক ওষুধের গ্রুপ নাম হলো ডক্সিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড। গনোরিয়ার ঔষধ হিসেবে এটি প্রতিদিন দুটি ক্যাপসুল সেবন করতে হয়। প্রতিদিন সকালে একটি  এবং রাতে একটি ক্যাপসুল সেবন করতে হয়। খাওয়ার পর ভরা পেটে খেতে হবে। এভাবে এই ওষুধ ১০ দিন সেবন করতে হবে। এই নিয়ম শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য। গর্ভাবস্থায় ও স্তনদানকালে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ  করে সেবন করতে হবে।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: ডক্সিক্যাপ ক্যাপসুল সেবনে নিম্নে উল্লেখিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সমূহ দেখা যায়:
  • বমিবমি ভাব
  • বমি
  • ডায়রিয়া
  • ত্বকে ফুসকুড়ি
  • হেমোলাইটিক এনেমিয়া
  • ইউসিনোফিলিয়া 
দাম: ডক্সিক্যাপ (Doxicap) প্রতিটি ক্যাপসুল এর মূল্য ২.২০ টাকা এবং প্রতি পাতা ক্যাপসুল এর মূল্য ২২ টাকা।

ডক্সিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড গ্রুপের আরো কিছু গনোরিয়া এন্টিবায়োটিক ঔষধ এবং সাথে ব্র্যান্ডের নাম নিচে দেওয়া হলো:
  • Doxacil Capsule (Square)
  • Doxin Capsule (Opsonin)
  • Ipadox Capsule (Incepta)
  • Megadox Capsule (Beximco)
  • Oriodox Capsule (Orion)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ডক্সিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড গ্রুপের সকল ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একই।

গনোরিয়া রোগের হোমিও ঔষধ

  • Cannabis Sativa
  • Thuja cc 30

গনোরিয়া হলে কি কি সমস্যা হয়?

  • বন্ধ্যাত্ব
  • গর্ভাবস্থায় আক্রান্ত হলে বাচ্চা অন্ধ হতে পারে
  • গলা ব্যথা
  • যৌনাঙ্গে ব্যথা
  • যৌনাঙ্গে ফোলা ফোলাভাব বা লালভাব
  • যৌনাঙ্গ দিয়ে পুঁজ বের হওয়া
  • মলদ্বারে আক্রমণ (চুলকানি ও রক্তপাত)
  • জ্বর 
  • যোনি থেকে ডিসচার্জ 
  • ঘন ঘন প্রস্রাব 
  • প্রস্রাব ব্যথা বা জ্বালা করা 
  • গলা ব্যথা
  • পিরিয়ডে সমস্যা 
  • কোমর ও তলপেট ব্যথা
  • কুচকির লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া
  • মিলনের পর সামান্য রক্ত বের হওয়া
  • যোনিপথের আশপাশের কিছু গ্রন্থি ফুলে যায় ও ফোঁড়া হয়
  • প্রচুর পরিমাণে বিজলপুঁজ মিশ্রিত বা পুঁজের মতো প্রস্রাব বের হওয়া
Next Post Previous Post